বর্তমান বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবস্থা যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে তা হলো সাবমেরিন ক্যাবল। বিশ্ব জুড়ে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে বিস্তৃত হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ অসংখ্য সব ক্যাবল এর মাধ্যমে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ডাটার আদান প্রদান হচ্ছে প্রতি মূহুর্তে। হাজারো নেটওয়ার্কের মধ্যে সাবমেরিন ক্যাবল এর মধ্য দিয়ে ডাটার পারস্পরিক এই আদান প্রদান -এর মধ্যে দিয়েই গড়ে উঠেছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা। ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্ব আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইন্টারনেট।
দুইটি সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত বাংলাদেশ
বর্তমানে বিশ্বে মোট সাবমেরিন ক্যাবল এর সংখ্যা ৪৬৩টি। সাবমেরিন ক্যাবল গুলোর মধ্যে সিমিউই সিরিজটি এই উপমহাদেশে বেশ গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সিমিউই-১ হতে সিমিউই-৫ পর্যন্ত মোট পাঁচটি ক্যাবল রয়েছে এই সিরিজের। বাংলাদেশ সর্বপ্রথম যুক্ত হয়ে সিমিউই-৪ ক্যাবলে ২০০৫ সালে এবং পবর্তীতে ২০১৭ সালে যুক্ত হয় সিমিউই-৫ ক্যাবলে। বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানী লিমিটেড (বিএসিসিএল) কক্সবাজার হতে সিমিউই-৪ এবং কুয়াকাটা হতে সিমিউই-৫ ক্যাবল দুটোর সাথে যুক্ত।
সিমিউই-৪ ক্যাবলের মাধ্যমে সংযুক্ত অঞ্চল সমূহ
সাউথ-ইস্ট এশিয়া মিডিল-ইস্ট এবং ওয়েস্টার্ন ইউরোপ এই তিনটি অঞ্চলকে যুক্ত করে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে সিমিউই-৪ (SEA-ME-WE-4) সাবমেরিন ক্যাবল। এই ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের ১৫টি দেশ। দেশ গুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সুদান, ইটালি, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, ফ্রান্স, মিশর এবং আরব আমিরাত।
সিমিউ-৪ ক্যাবলের দৈর্ঘ্য এবং ব্যয়
সিমিউই-৪ ক্যাবলটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮,৮০০ কিলোমিটার। সাউথ ইস্ট এশিয়া , ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট এবং মিডল ইস্ট ইউরোপ এই অঞ্চল গুলোর ইন্টারনেট ব্যাকবোন হচ্ছে এই ক্যাবল। এই ক্যাবল স্থাপনের প্রজেক্টটি শুরু হয় ২৭ মার্চ, ২০০৪ সালে। বিখ্যাত দুই প্রতিষ্ঠান Alcatel Lucent এবং Fujitsu যৌথভাবে প্রায় ১৮ মাস কাজ করে সিমিউই-৪ ক্যাবল স্থাপনের কাজটি শেষ করে ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৫ সালে। প্রায় ৫০০ শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে স্থাপন করা হয় এই ক্যাবল।
বাংলাদেশ পাচ্ছে ৬৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ
২০০৫ সালে, প্রাথমিক অবস্থায়, এই ক্যাবলটি প্রতি সেকেন্ডে ১.২৮ টেরাবিট ডাটা ট্রান্সমিশন ক্ষমতা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ২০১৫ সালে এসে ট্রান্সমিশন সক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে প্রতি সেকেন্ডে ৪.৬ টেরাবিটে দাঁড়ায়। যা ভবিষ্যতে ৬.৯ টেরাবিট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এই ক্যাবলে ব্যবহার করা হয়ে DWDM(Dense Wave Length Division Multiplexing) প্রযুক্তি।সিমিউই-৪ ক্যাবল এর মাধ্যমে বিএসসিসিএল বর্তমানে ৬৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ বাংলাদেশে সরবরাহ করছে যার মধ্যে ৬৩৭ জিবিপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবিষ্যতে তা ১৪০০ জিবিপিএস এ উন্নীত করা হবে বলে জানা যায়।
ডিজিটাল বাংলাদেশের বিনির্মাণে অন্যতম চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে উন্নত ইন্টারনেট সেবা যা প্রদানে অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সিমিউই-৪ সাবমেরিন ক্যাবল। প্রায় ১৬ বছর ধরে দেশের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ এর চাহিদা পূরণে রয়েছে এই ক্যাবলের অবদান। ক্যাবলটির মেয়াদকাল ২০২০৫ সাল পর্যন্ত হলেও আশা করা যায় এই ক্যাবল এর মাধ্যমে আরও দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট সেবা পাবে বাংলাদেশ।
এক নজরে সিমিউই-৪(SEA-ME-WE-4):
ক্যাবলের ধরনঃ অপটিক্যাল ফাইবার
দৈর্ঘ্যঃ ১৮,৮০০ কিঃমিঃ
সংযুক্ত দেশঃ ১৫টি
অপারেশন শুরুঃ ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৫ সাল
ক্যাবল স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানঃ Alcatel Lucent এবং Fujitsu
বর্তমান ক্যাপাসিটিঃ ৪.৬ টেরাবিট
বাংলাদেশের বর্তমানে প্রাপ্ত ক্যাপাসিটিঃ ৬৫০ জিবিপিএস+
মেয়াদকালঃ ২০ বছর (২০০৫ সাল হতে ২০২৫ সাল)
ক্যাবল-এর মালিকঃ কনসোর্টিয়াম(১৫ টি দেশের ১৬টি টেলিকম প্রতিষ্ঠান)
1 Pingback