১। সাবমেরিন ক্যাবল কি ?
 

সাবমেরিন ক্যাবল সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সমূহের মধ্যে ডাটা আদান প্রদানের জন্য সংযোগ স্থাপনকারী অপ্টিক্যাল ক্যাবল। সাবমেরিন ক্যাবল এর মাধ্যমে তাৎক্ষনিক পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ডাটা আদান প্রদান করা যায়। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। সমুদ্রের তলদেশে স্থাপনের জন্য অত্যন্ত মজবুতভাবে তৈরী করা হয় এই ক্যাবল।

২। কিভাবে সাবমেরিন ক্যাবল কাজ করে?

আধুনিক সাবমেরিন ক্যাবল ফাইবার-অপটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে ডাটা প্রেরণ করে। অত্যন্ত সরু কাঁচ তন্তু ব্যবহার হয় সংকেত প্রেরণের মাধ্যম হিসেবে। এই তন্তু একাধিক স্তরের প্রতিরক্ষা (স্টীল, প্লাস্টিক ইত্যাদি) ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। এক প্রান্ত হতে লেজার এর মাধ্যমে আলোক সংকেত প্রেরণ করা হয় অন্য প্রান্তে রিসিভার সেই সংকেত রিসিভ করে।

৩। বিশ্বে বর্তমানে সাবমেরিন ক্যাবল এর সংখ্যা কত?

বর্তমানে বিশ্বে ৪৩৬ টি সাবমেরিন ক্যাবল রয়েছে যা ২০২১ সালের প্রাপ্ত তথ্য হতে পাওয়া যায়। তবে এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে কারণ সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন ক্যাবল সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে আবার একই সাথে পুরানো ক্যাবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।

৪। সাবমেরিন ক্যাবল এর পুরুত্ব কেমন?

মূলত সাবমেরিন ক্যাবল এর মধ্য দিয়ে মূল সংকেতটি আদান প্রদান ঘটে কাঁচের তৈরী চুলের মতো সরু তন্তুর মাধ্যমে। যেহেতু ক্যাবলটি পানির নীচ দিয়ে বিছানো হয় তাই ক্যাবলটির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কয়েক ধরনের ইনসুলেশন ও প্রতিরক্ষা স্তরের মাধ্যমে একে অত্যন্ত মজবুত করা হয়। বাগানে পানি দেয়ার জন্য যে পাইপ ব্যবহার করা হয় অনেকটা সেরকমই হয়ে থাকে এই ক্যাবলের পুরুত্ব।

৫। ক্যাবল কি সমুদ্রের তলদেশেই বিছানো হয়?

জ্বী! একদম সমুদ্রের তলদেশেই সী-বেডে বিছানো হয় এই ক্যাবল। সমুদ্রের তীরবর্তী জায়গা সমূহে ক্যাবল মাটি অথবা বালির তলদেশেই থাকে কিন্তু গভীর সমুদ্রে ক্যাবল সমুদ্রের তলদেশের উপরেই বিছানো হয়ে থাকে।

৬। সব মিলিয়ে বিশ্বে এখন ব্যবহৃত সাবমেরিন ক্যাবল গুলোর দৈর্ঘ্য কত কিঃমিঃ?

২০২১ সালের প্রাপ্ত তথ্যানুসারে বর্তমানে বিশ্বে সচল সাবমেরিন ক্যাবলের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ লক্ষ কিঃমিঃ। তবে ক্যাবল এর দৈর্ঘ্য খুব কম হতে পারে আবার অনেক বেশীও হতে পারে। খুব কম দৈর্ঘ্যের কেবল Celtix Connect যার দৈর্ঘ্য মাত্র ১৩১ কিঃমিঃ। দৈর্ঘ্যে বড় এমন ক্যাবল হচ্ছে এশিয়া-আমেরিকা গেটওয়ে । এই ক্যাবলটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০০০ কিঃমিঃ।

৭। সাবমেরিন ক্যাবল এর মালিক কে?

অনেকের মনেই এই প্রশ্নটি আসে – এই যে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে এত দীর্ঘ সব ক্যাবল এগুলোর মালিকানা কার ? কারাই বা এই ক্যাবল গুলো নিয়ন্ত্রন করছে? মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমুহের অনেক গুলো টেলিকম প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে কনসোর্টিয়াম গঠনের মধ্য দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সিমিউই-৪ ক্যাবলটির কথা। বিশ্বের প্রায় ২০ টি দেশের বিভিন্ন কোম্পানী যৌথ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে এই ক্যাবলটি স্থাপন করেছে। তবে বর্তমানে গুগল, ফেইসবুক, এমাজন এর মতো কন্টেন্ট প্রোভাইডাররা সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে বেশ বড়সড় বিনিয়োগ করছে।

৮। ইন্টারনেটের জন্য অথবা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে স্যাটেলাইট কেন ব্যবহার করা হয় না?

যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে স্যাটেলাইট অত্যন্ত কার্যকরী একটি মাধ্যম কিন্তু অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাছাড়া অপটিক্যাল ফাইবার যে পরিমাণ ডাটা ট্রান্সমিশনে সক্ষম সে তুলনায় স্যাটেলাইট এর ডাটা ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি অনেক কম। যে সকল এলাকায় ফাইবারের সংযোগ দেয়া সম্ভব হয় না সে সকল এলাকায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। যেমন সমুদ্রের জাহাজ গুলো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত হয় কিংবা বিমানে চলাচলের সময় যাত্রীদের বিভিন্ন এয়ারলাইনস গুলো আকাশ পথে ইন্টারনেটের যে সংযোগ প্রদান করে তাও স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই।

৯। সাবমেরিন ক্যাবল পুরানো হয়ে গেলে কি হয়?

সমুদ্রের তলদেশের এই ক্যাবল গুলো ন্যুনতম যেন ২৫ বছর সার্ভিস দিতে পারে সেভাবেই তৈরী করা হয়। সময়ের সাথে সাথে ক্যাবল গুলো সক্ষমতা কমতে থাকে। শুরুতে যে পরিমাণ ডাটা ট্রান্সমিশন করতে সক্ষম থাকে এক সময় তা কমে আসে। এবং ক্যাবল গুলোর রক্ষণাবেক্ষণও ব্যয় বহুল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন কোম্পানী এই ক্যাবল গুলো পুনরায় ব্যবহার করার জন্য সমুদ্রের তলদেশ থেকে তুলে নিয়ে আসে। যে সকল দেশের আর্থিক সক্ষমতা কম কিংবা ব্যান্ডউইথ এর চাহিদা কম সে সকল দেশের জন্য পুনরায় নতুন কোন রুটে এই ক্যাবল স্থাপন করা হয়।